১৯৮৯ সালে রানীগঞ্জ কয়লাখনি পতনের সত্য ঘটনাকে অবলম্বন করে নির্মিত করা হয়েছে অক্ষয় কুমারের বহু প্রতীক্ষিত সিনেমা মিশন রানীগঞ্জ |
হিন্দি চলচ্চিত্র তারকা অক্ষয় কুমারের গত কয়েকটি সিনেমা ফ্লপ হওয়ার কারণে মিশন রানীগঞ্জ সিনেমাটিকে অক্ষয় কুমারের এক কামব্যাক ফিল্ম হিসেবে ধরা হচ্ছে | রানীগঞ্জ কয়লা খনিতে ঘটে যাওয়া এক বিভৎস দুর্ঘটনাকে সিনেমার মাধ্যমে দেখানো হবে |
1.Mission Raniganj: The Great Bharat Rescue
মিশন রানীগঞ্জ সিনেমাটিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করবেন হিন্দি চলচ্চিত্র জগতের জনপ্রিয় নায়ক অক্ষয় কুমার | এই সিনেমাটি অক্ষয় কুমারের এক গুরুত্বপূর্ণ সিনেমা হতে চলেছে কারণ গত কয়েক বছরে অক্ষয় কুমার বিশেষ কোন জনপ্রিয় সিনেমা দর্শককে উপহার দিতে পারেনি,তাই এই সিনেমাটিকে অক্ষয় কুমারের কামব্যাক ফিল্ম হিসেবে ধরা হচ্ছে |
টিনু সুরেশ দেশাই পরিচালিত মিশন রানীগঞ্জ সিনেমার প্রধান চরিত্রে অভিনয় করবে অক্ষয় কুমার এবং অক্ষয় কুমারের বিপরীতে অভিনয় করবে পরিণত চোপড়া | অক্ষয় কুমার মূলত সাহসী যোদ্ধা যশবন্ত সিং গ্রিলের ভূমিকায় অভিনয় করবে যিনি রানীগঞ্জে কয়লা খনিতে ধসের পরে অনেক শ্রমিকের জীবন বাঁচিয়েছিলেন |
2.মিশন রানীগঞ্জ এর আসল ঘটনা
পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল এবং দুর্গাপুর মহকুমায় অবস্থিত রাণীগঞ্জ কয়লা খনিটি ১৭৭৪ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন | আর এটি আবিষ্কার করেছিলেন জন সুমনার এবং সুয়েতোনিয়াস গ্রান্ট হিটলি |
রানীগঞ্জে কয়লা খনির খনন কার্যের জন্য লাইসেন্স দিয়েছিল লর্ড ওয়ারেন হেস্টিং এবং সেই কারণেই ভারতে প্রথমবারের মতো কয়লা খনির কাজ শুরু হয় | যদিও রাণীগঞ্জে নিয়মিতভাবে ১৮২০ সালে আলেকজান্ডার এন্ড কো এর অধীনে কাজ শুরু হয় এবং উনবিংশ এবং বিংশ শতকের অধিকাংশ সময় রানীগঞ্জ ভারতের প্রধান কয়লা উৎপাদনকারী খনি হিসেবে পরিচিত ছিল |
সেই সময় ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনের কারণে রানীগঞ্জে কয়লার খনন কার্য এলোমেলো ভাবে হত | সেই সময় ব্রিটিশদের ধন-সম্পদ লুটের কারণে কয়লা খনিটিতে সঠিকভাবে খনির ছাদ এবং দেয়ালকে সমর্থক করার জন্য কোন ব্যবস্থা করা হয়নি এর ফলে যতটা সম্ভব সম্পদ সংগ্রহ করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য |
3. ১৩ নভেম্বর ১৯৮৯ সালে রানীগঞ্জে কি ঘটেছিল
১৯৮৯ সালের ১৩ নভেম্বর মিশন রানীগঞ্জের কয়লা খনিতে কর্মরত কিছু শ্রমিকেরা কয়লার দেওয়াল ভাঙ্গার জন্য ধারাবাহিকভাবে বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছিল | প্রচন্ডভাবে বিস্ফোরণের ফলে খনির স্ট্রাকচার বা কাঠামো পুরোপুরি কেঁপে ওঠে এবং খনিতে কর্মরত শ্রমিকদের কাজের স্থান সংলগ্ন ভূগর্ভস্থ এলাকার একটি দেওয়ালে ফাটল ধরে |
দেওয়ালে ফাটল ধরার ফলে খনির ভিতরে প্রচুর জল প্রবেশ করে এবং বন্যার সৃষ্টি হয় এর ফলে কয়লা খনিতে কর্মরত ছয় জন শ্রমিকের প্রাণ হারায় | এছাড়া আরো ৬৫ জন শ্রমিক গুহার ভিতরে আটকে পড়ে | গুহার ভিতরে জলের স্তর খুব দ্রুতগতিতে বাড়ছিল এবং পরিকাঠামগত অস্থিরতার কারণে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধার কাজে আরও বাধার সৃষ্টি হয়ে পড়েছিল |
4.মিশন রানীগঞ্জ এর সত্যিকারের নায়ক
এরকম একটা বীভৎস দুর্ঘটনা ঘটার পরে সবাই যখন আশা ছেড়ে দিয়েছিল ঠিক সেই সময় আইআইটি ধানবাদের একজন তরুণ যুবক এবং এক সাহসী যোদ্ধা প্রাক্তন Coal India Limited এর Chief Engineer এবং খনি এক্সপার্ট যশবন্ত সিং গিল আটকে পরা শ্রমিকদের উদ্ধার করতে এসেছিলেন |
5.মিশন রানীগঞ্জ কিভাবে সাকসেস হলো
যশবন্ত সিংগিল ২১ ইঞ্চি ব্যাস এর একটি ৬ ফুট উঁচু আয়রন ক্যাপসুল ডিজাইন করেছিলেন এবং নতুন একটি বোরহল খনন করে খনির ভেতরে ফেলে ছিলেন | তিনি ক্যাপসুলটি নামাতে এবং উঠানোর জন্য ১২ টন বিশিষ্ট একটি ক্রেন ব্যবহার করেছিলেন,এবং আটকে থাকা ৬৫ জন শ্রমিক কে একে একে উপরে উঠেছিলেন | ঘটনাটি পুরো উদ্ধার অভিযান শেষ করতে যশবন্ত সিং গিলের সময় লেগেছিল প্রায় ছয় ঘন্টা এবং এই ঘটনাটি প্রায় 2000 জন লোক নিজের চোখে দেখেছিল |
রানীগঞ্জে ঘটে যাওয়া এই দুঃসাহসিক কাজের জন্য শ্রমিক উদ্ধার কাজের পর যশবন্ত সিংগিলকে একটি অবর্ণীয় সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল | তার এই অপারেশন মিশন রাণীগঞ্জ কয়লা খনির ইতিহাসে একটি জাতীয় রেকর্ড হিসাবে লিমকা বুক অফ রেকর্ডসে উল্লেখ পেয়েছে | প্রতিবছর ১৬ নভেম্বর কোল ইন্ডিয়া যশবন্ত সিংগিল এবং তার অবিশ্বাস্য সাহসিকতাকে সম্মান জানাতে রেসকিউ ডে হিসেবে উদযাপন করে | তার এই গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামস্বামী ভেঙ্কটরহমান গিলকে সর্বোত্তম জীবন রক্ষা পদকে সম্মানিত করেছিলেন |
6.মিশন রায়গঞ্জ এর প্রধান চরিত্রগুলি কারা
মিশন রায়গঞ্জ সিনেমাটিতে যারা মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করবে তারা হলো অক্ষয় কুমার, পরিণতি চোপড়া, রবি কিষান এবং কুমুদ মিশ্র,পবন মাল্হোত্রা, লঙ্কেশ ভরদ্বাজ, রাজেশ শর্মা | সিনেমাটির ছয় অক্টোবর ২০২৩ এ সারা দেশব্যাপী মুক্তি পাবে |